Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পারষ্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ডিমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির অভিযোগে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডকে আর্থিক জরিমানা


প্রকাশন তারিখ : 2025-02-24

২০২২ সালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। অনুসন্ধানে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড সমধর্মীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস গ্রুপ, সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড, ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতি, তেজগাঁও ইত্যাদির সাথে পারষ্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ডিমের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ডিমের সরবরাহ সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেপ্রেক্ষিতে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড এর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (১), উপ-ধারা (২) এর দফা (ক) এর উপ-দফা (অ) এবং দফা (খ) এর আওতায় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে এমন ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থাকে সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডিমের ক্রয় বা বিক্রয়মূল্য অস্বাভাবিকভাবে  নির্ধারণের অভিযোগে কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠান পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড ডিম ব্যবসায়ীদের ডিম আনতে গাড়ি পাঠানোর পরে মেসেজ প্রদানের মাধ্যমে বাজার দরের চেয়ে ৩০-৪০ পয়সা বেশি দামে ডিমের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করত। উল্লেখ্য, সমজাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে এ মূল্য নির্ধারণ করা হতো মর্মে কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয়। ব্যবসায়ীরা উক্ত নির্ধারিত মূল্যে ডিম বিক্রয়ে রাজি না হলে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড ব্যবসায়ীদের ডিম সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানাত। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি কমার্শিয়াল লাল ডিমের সাথে হ্যাচিং ডিম মিশিয়ে কমার্শিয়াল ডিমের দামে ব্যবসায়ীদের কিনতে বাধ্য করত, না হলে গাড়ি আটকে রাখত। গাড়ি ফেরত আসলে ব্যবসায়ীদের গাড়ি ভাড়ার টাকা ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে তাদের থেকে ডিম কিনতে বাধ্য হতেন। অপরাধ সংগঠনের সময়কালে বাজারে প্রতি পিস ডিমের পাইকারী মূল্য ১১.৬০-১১.৮০ টাকা হলেও পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড কর্তৃক বিক্রিকৃত প্রতি পিস ডিমের পাইকারী মূল্য ছিল ১২ টাকা। এভাবে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড ডিমের বাজারে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে ডিমের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলো এবং ডিমের দাম বৃদ্ধি করেছিলো।

মামলায় আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করা হয় এবং শুনানীকালে তদন্ত প্রতিবেদনের উপর প্রতিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর বক্তব্য শোনা হয়। প্রতিপক্ষের যুক্তিতর্কের সমর্থনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন ও বিজ্ঞ আইনজীবীর লিখিত ও মৌখিক যু্ক্তিতর্কের ভিত্তিতে কমিশন নিম্নবর্ণিত আদেশ প্রদান করেছেঃ

প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠান পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড সমধর্মীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পরোক্ষভাবে ডিমের বিক্রয়মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং একই প্রক্রিয়ায় তাদের উৎপাদিত ডিমের সরবরাহ এবং বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে যা প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (১) ও ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (২) এর দফা (ক) এর উপ-দফা (অ) এবং দফা (খ) এর লঙ্ঘন প্রমাণিত হওয়ায় একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠান পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড এর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনে এটিই প্রথম মামলা। তাই সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডকে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ২০ এর উপ-ধারা (ক) এর দফা (আ) মোতাবেক কতিপয় নির্দেশনাসহ ৭২,০২,৯৭৩ (বাহাত্তর লক্ষ দুই হাজার নয়শত তিহাত্তর) টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর বিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পূর্ববর্তী ৩ বছরের গড় টার্নওভারের উপর ভিত্তি করে এই জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সংশ্লিষ্ট খাতে উক্ত আর্থিক জরিমানার অর্থ জমা করতে বলা হয়। অন্যথায় প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ২০ (গ) মোতাবেক প্রতিদিনের ব্যর্থতার জন্য অনধিক ০১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করতে হবে। তবে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর বিধান মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ বা আপিল করতে পারবে।