Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৫ জুলাই ২০২৪

অবৈধভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ, ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট বন্ধ করা সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত


প্রকাশন তারিখ : 2024-07-14

গত ১১/০৭/২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সভাকক্ষে অবৈধভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ, ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট বন্ধকরণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর কমিশনের চেয়ারপার্সন  মহোদয়ের সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয় । সভায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বিজ্ঞ সদস্য জনাব সালমা আখতার জাহান, জনাব সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান এবং জনাব মোঃ হাফিজুর রহমানসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (কর) জনাব মুনিয়া সিরাত, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (খামার) জনাব মোঃ শরিফুল হক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক জনাব মোহাম্মদ রেজা আহমেদ খান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জনাব বিকাশ চন্দ্র দাস, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান জনাব মোঃ মাহমুদুল হাসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জনাব মোছাঃ ফুয়ারা খাতুন, গাজীপুর লেয়ার পোল্ট্রি খামারী জনাব আমজাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব মোঃ সুমন হাওলাদার  উপস্থিত ছিলেন । 

 

সভায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতির ১২/৩/২০২৪ তারিখের চিঠির বক্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয় এবং এর ওপর সভায় আলোচনা করা হয় ।  উক্ত চিঠিতে বলা হয়েছে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের আধিপত্য ধরে রাখতে সকল ডিম ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে তেজগাঁও ডিম সমিতি ডিমের বাজার অস্থির করে তোলে। আবার নিজেদের স্বার্থে ডিমের দাম কমিয়ে তলানিতে নিয়ে আসে। প্রথমে খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে পরবর্তীতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফজরের নামাজের পর তারা মূল্য নির্ধারণ করে সকল জায়গায় মোবাইল এসএমএস ও ফেসবুকের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে বাড়তি বা কমতি দাম বাস্তবায়ন করে।

খামারিদের কাছ থেকে কম দামে ডিম কিনে কোল্ড স্টোরেজে রেখে এখন অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। ডিম সিন্ডিকেট ডিমের দাম বাড়ালে খামারিরাও ন্যায্য দাম পাচ্ছে। ডিম সিন্ডিকেট ডিমের দাম কমালে খামারিরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

সভায় জানানো হয় যে কমিশনের মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে একজন অভিযোগকারী জানিয়েছেন, তেজগাঁও ডিমের বাজার চাইলে দাম বাড়াতে পারে আবার তেজগাঁও বাজার চাইলে দাম কমাতে পারে এতে চাহিদা যোগানের কোন প্রয়োজন হয় না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জনাব বিকাশ চন্দ্র দাস জানান যে, ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতি তেজগাঁও এবং ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি, কাপ্তান বাজার ভোররাতে এসএমএস’র মাধ্যমে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। ডিম বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ক্যাশমেমো দেয়া হয় না। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ২৬ ও ২৭ জুন ২০২৪ তারিখে অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে বাজারে ডিমের দাম হ্রাস পেয়েছিল। ডিমের বাজারে ট্রাকে ডিম রেখে হাতবদল হয়।  ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতি, তেজগাঁও বড় পরিসরে এবং ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড, কাপ্তান বাজার ছোট পরিসরে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপরিচালক (খামার) জনাব মোঃ শরিফুল হক জানান, ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সবার ভূমিকা রয়েছে। ফিড ডিমেও যায় আবার ব্রয়লারের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। ডিম উৎপাদনে এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ডিমের বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক খামারি, মাঝারি খামারি এবং বৃহৎ খামারি অন্তর্ভুক্ত আছে। ডিমের মূল্য উল্লেখ করে এসএমএস প্রেরণের বিষয়টি বিভিন্ন ডিম ব্যবসায়ী সমিতিও স্বীকার করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো জানান যে, পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্যাশমেমো প্রদান করার জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীগণকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা জারি করার জন্য সভার পক্ষ হতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানানো হয়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপরিচালক জনাব মোহাম্মদ রেজা আহমেদ খান জানান যে, প্রাইস ফিক্সিং আইন সম্মত নয়। কৃষি বিপণন আইন, ২০০৮ মোতাবেক রশিদ ছাড়া কেউ পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। উৎপাদনকারীর নিকট থেকে যারা ডিম ক্রয় করেন তারা সেই ক্রয় মূল্য প্রকাশ করেন না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিং কাজ বৃদ্ধি করাসহ অনলাইন প্লাটফর্ম করার বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান জনাব জনাব মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান, দাম স্থিতিশীল থাকলে ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তি হয় না। মার্কেট ওঠা-নামা করলে সমস্যা হয়। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করে। এসএমএস’এ কীভাবে দাম নির্ধারণ হয়-মনে হয় এর পিছনে একটা গ্রুপ কাজ করছে। ডিম, মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বিষয়ে বিটিটিসি কর্তৃক সম্পাদিত সমীক্ষা মোতাবেক বাংলাদেশে ডিম, মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি খাদ্য আমদানিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি সাধারণত পাওয়া যায় না এবং কেউ আমদানি করে না। এ সুযোগে চড়া দাম আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন ডিম, মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জনাব মোছাঃ ফুয়ারা খাতুন জানান, ০৪/০৭/২০২৪ তারিখে ঢাকা মহানগরীর কাঁঠাল বাগান এলাকায় বাজার মনিটরিং টিমের সদস্য হিসেবে ডিমের বাজার পরিস্থিতি দেখতে যান। মনিটনিং টিমের উপস্থিতি দেখে ২/১ জন ব্যতীত বাকী ডিম ব্যবসায়ীগণ দোকান ছেড়ে চলে যান। এতে প্রতীয়মান হয় সংশ্লিষ্ট ডিম ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য খারাপ।

 

সভার এক পর্যায়ে ‘ডিম সিন্ডিকেটের কারসাজি’ শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভির একটি ভিডিও রিপোর্ট প্রদর্শন করা হয়। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, একটি ডিম কিনলে এক টাকা চলে যায় বিশেষ কারো হাতে। এ টাকা চলে যায় সিন্ডিকেটের পকেটে। খামারি পর্যায়ে ডিমের দাম বাড়েনি। এসএমএস’র মাধ্যমে প্রতিদিন ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় একটি চক্র।

 

বিস্তারিত আলোচনান্তে সভায় নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:

 

সভার নোটিশ পাওয়া সত্ত্বেও ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতি, তেজগাঁও এবং ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড, কাপ্তান বাজার এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা অন্য কোন উপযুক্ত প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত না হওয়ায় উক্ত দুই সমিতি বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণসহ প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ মোতাবেক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;

 ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ, কতিপয় সমিতি কর্তৃক ডিমের বাজার নির্ধারণ, প্রাইস ফিক্সিং, ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে মোবাইল এসএমএস ও ফেসবুকের মাধ্যমে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (অনুসন্ধান, তদন্ত, পুনর্বিবেচনা ও আপিল) প্রবিধানমালা, ২০২২ মোতাবেক অনুসন্ধানপূর্বক ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য কমিশনের সহকারী পরিচালক জনাব নূর উদ্দিন যোবায়ের ও সহকারী পরিচালক জনাব মোঃ নাজমুল হোসেন এর সমন্বয়ে অনুসন্ধান দল গঠন করতে হবে;

দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া, এ সভার আলোচনার আলোকে ডিম ক্রয়/বিক্রয়- এ যথাযথ ক্যাশমেমো ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে লিখিত আদেশ জারি করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়;

ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে চলমান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এ সভার আলোচনার বিষয়বস্তুকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জাতীয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-কে অনুরোধ জানানো হয়।

বিভিন্ন পণ্যের ডাটাবেজ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাথে শেয়ার করার জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়।